তারিফ টা 10ই ডিসেম্বর 2020 বৃহস্পতিবার বিয়ে হয়েছিল তাদের। শনিবার ছিল বৌভাত । তার প্রস্তুতি চলছিল জোর কদমে কিন্তু শনিবার ভোর আচমকাই নেমে এলো জমের হাত। আনন্দ মুখর উজ্জ্বল সন্ধ্যার যে প্রতিক্ষা ছিল পাত্রীর অতর্কিত অকালপ্রয়াণে নিভে গেল সব আলো। মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে যাদবপুর বিদ্যাসাগর করণিয় একটি বাড়িতে। বৃহস্পতিবার বিয়ে হয়েছিল নীলাদ্রি চক্রবর্তীর। শুক্রবারে বাঙালি রীতি অনুযায়ী স্ত্রী বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন। নীলাদ্রি একাই শুয়ে ছিলেন নিজের ঘরে। শনিবার সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ বাবা নিশিথ চক্রবর্তী হঠাৎ লক্ষ্য করেন ছেলের ঘর ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। নীলতিমর বিছানায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তার হাতে সিগারেটের আগুনে বালিশ পুড়ে ধোঁয়ায় ভর্তি ঘর। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে নীলাদ্রি কে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পুলিশ দেহ-ময়না তদন্তে পাঠায়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, কার্বন মনোক্সাইড শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে নীলাদ্রির। বদ্ধ ঘরে সিগারেটের আগুন ধোঁয়ায় এমন মৃত্যুর আগেও ঘটেছে। তবে বিয়ের পরের দিন এই মর্মান্তিক ঘটনায় বাক্যহারা সদ্য বিবাহিতা কন্যা। শোকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে দুই পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী। নীলাদ্রির প্রতিবেশী অরূপ রায় জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে নীলাদ্রির বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন, আড্ডা দেন। ভোর চারটে নাগাদ বাড়ির একতলার ঘরে চলে যান। সেখানে সম্ভবত ধূমপান করছিলেন।সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ তার বাবা নিশীথ চক্রবর্তী হঠাৎ ছেলের ঘরে যান। গিয়ে দেখেন ছেলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। নিশীত বাবু কলকাতা পুরসভার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডে একজন সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। শুধু তাই নয় ৯৯ ওয়ার্ডের প্রাক্তন সভাপতিও। শনিবার বৌভাতে আত্মীয় পরিজন ও পাড়ার প্রতিবেশীদের আমন্ত্রণ ছিল। সেই মাঠের সামনে রাস্তায় শনিবার সন্ধ্যা থেকে দাঁড়িয়েছিল জেনেটর এর গাড়ি।
কিন্তু মন্ডপ অন্ধকার, জনশূন্য। আনন্দ অভি গিয়ে শোক,দুঃখ ক্লান্তির আবহাওয়া। সাধারণের আলোচনায় নীলাদ্রির মৃত্যু নিয়ে আলোচনা চলছে রাত পর্যন্ত। দুই পরিবারের কেউই কথা বলার মত অবস্থায় ছিলেন না। পড়শীদের থেকে জানা গিয়েছে, সত্য বিধবা নববধূকে শ্বশুরবাড়িতেই মেয়ের যত্নে রাখতে চায় নীলাদ্রির পরিবার। একটি বেসরকারি সংস্থার কাজ করতেন নীলাদ্রি। যার সঙ্গে বিয়ে সেই তরুণী স্থানীয়। প্রায় তিন বছর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত।
বিয়ের পর স্ত্রীর সঙ্গে ছবি দিয়ে লিখেন,'অপেক্ষার অবসান, আমাদের চক্রবর্তী পরিবার এ তোমাকে স্বাগত'। তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই যে এমনটা হবে, কেউ ভাবতেও পারিনি, এখনো পারছে না।
ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে নিলাদ্রীর গ্যাস্ট্রিক আলসার ছিল। লিভারের অবস্থা ভাল ছিল না। তদন্তকারীদের অনুমান, হয়তো আচ্ছন্ন অবস্থায় সিগারেটের আগুন যে বালিশের লেগেছে বুঝতে পারেননি যুবক। অচিরেই জীবনের প্রতি অবহেলা না হয় বিষগ্যাস কেড়ে নিল তরতাজা প্রাণ কে। নতুন জীবন শুরু করার আগেই নিভে গেল প্রদীপ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন